বেশ কয়েকমাস ধরে সিম্ফনি তার গ্রাহকদের স্বল্পমূল্যের অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যাবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। একে একে তারা ডাব্লিউ ৫, ডাব্লিউ ১০, ডাব্লিউ ২৫, ডাব্লিউ ৫০ এবং ডাব্লিউ ১০০ স্মার্টফোনগুলো বাজারে আনে। কিছু কিছু স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে সফল হলেও র্যাম, ইন্টারনাল মেমরি এবং প্রসেসর গতির স্বল্পতা বেশিরভাগ স্মার্টফোন ক্রেতাদের সমস্যায় ফেলেছে। ডাব্লিউ ১০০ সেই সমস্যাগুলোর ঊর্ধ্বে থাকলেও তার আকাশচুম্বী মূল্য (১৯,৯৯০ টাকা) তাকে গ্রাহক প্রিয়তা পায়নি।
এই ধারাবাহিকতায় পূর্বের ত্রুটি গুলো কাটিয়ে উঠতে সিম্ফনি এবার আনল ৪”পর্দা বিশিষ্ট এবং (পূর্বের তুলনায়) বেশ ভাল মানের হার্ডওয়্যার বিশিষ্ট তাদের নতুন স্মার্টফোন সিম্ফনি এক্সপ্লোরার ডাব্লিউ ৬০। বাজারে ছাড়ার পূর্বেই তারা বেশ চমক সৃষ্টি করেছিল এই ফোনের বিজ্ঞাপন (পত্রিকা এবং ওয়েবসাইটে) দিয়ে। কিন্তু চূড়ান্ত চমক তারা দেখাল মূল্যের দিক দিয়ে। যদিও সমালোচনাই বেশি সইতে হচ্ছে তাদের কিছু কাঙ্ক্ষিত এবং জনপ্রিয় সুবিধা সংযোজন না করায়। চলুন দেখি কেমন হল তাদের নতুন ফোনটি।
ডিজাইন:
ডাব্লিউ ৬০ এর ডিজাইন করা হয়েছে অন্যান্য ভাল মানের ফোনগুলোর মতই। সেটটির পুরুত্ব মাত্র ৯.৯ মিলি মিটার। ব্যাককভারের নিচের দিকে দেওয়া হয়েছে লাউড স্পিকার। চারপাশটাই কার্ভ আকৃতির। এক ব্যবহারকারীর কাছ থেকে জানা গেল ছবিতে যেমন দেখায় তারচেয়ে বাস্তবে আরো বেশি ভাল দেখতে সেটটা। ডিজাইন এমন করা হয়েছে যে প্রথম দর্শনেই পছন্দ হবে সকলের ।
হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার:
এই স্মার্টফোনে সিম্ফনি প্রথম চমক দিয়েছে হার্ডওয়্যার দিয়ে। হার্ডওয়্যারের দিক দিয়ে সিম্ফনি তার পূর্বের সকল স্মার্টফোনকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ফোনে তারা যুক্ত করেছে ১ গিগাহার্জ স্পিডের প্রসেসর তবে তা কোন কোম্পানির সেটা প্রকাশ করেনি তারা। আগের সেটগুলো যে কারণে ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে সেটা হল র্যাম এবং রম। এর স্বল্পতা। এবার তারা এই সমস্যার সমাধান বেশ ভাল ভাবেই করেছে। ডাব্লিউ ৬০-তে তারা র্যাম দিয়েছে ৫১২ মেগাবাইট এবং রম ৪ গিগাবাইট যা এই রেঞ্জের ফোনে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। আর মাইক্রো এসডি কার্ড এর মাধ্যমে ৩২জিবি পর্যন্ত মেমরি বাড়ানো যাবে। অপরদিকে ভাল গ্রাফিক্সের গেম খেলার জন্য এতে আছে ওপেনজিএল ইএস ২.০ জিপিইউ। অনেকেই বলছেন র্যাম খুবই কম কিন্তু আমি তা মনে করি না। বাজারের ফোনগুলোর মধ্যে ১ গিগাবাইট র্যাম সমৃদ্ধ ফোনের সর্বনিম্ন মূল্য ২৩,৫০০ টাকা (সনি এক্সপ্লোরার পি)। এবং ৫১২ মেগাবাইট র্যাম দিয়ে সব ধরনের কাজই বেশ ভাল ভাবেই করা সম্ভব। এছারা ওয়াই, ব্লুটুথ, মাইক্রো ইউএসবি পোর্ট সবই আছে এই ফোনে।
[ আরো দেখুন "ওয়ালটন প্রিমোঃ সাধ্যের মধ্যে অনেকখানি সুখ ! (রিভিউ)" ]
আর দ্বিতীয় চমক বলব অ্যানড্রয়েডের আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ৪.০ সংস্করণকে। বর্তমানে ভাল মানের ব্রান্ডের যে ফোন গুলো বাজারে আসছে সবগুলোই অ্যানড্রয়েডের আইসিএস সংস্করণ নিয়ে। সিম্ফনি তাদের বাজেট অ্যানড্রয়েডকেও আইসিএস ৪.০ সংস্করণে বাজারে এনেছে। অর্থাৎ আপনি প্রথম থেকেই ব্যাবহার করতে পারবেন অ্যানড্রয়েড আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ৪.০। এর জন্য রুট বা অন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি আগে এটা ব্যাবহার করে না থাকেন তবে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ এর গ্রাফিক্স এবং ইউজার ইন্টারফেস আপনাকে চমকিত করবেই। যদি পরে হ্যান্ডস অন রিভিউ করতে পারি তবে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ এর বিভিন্ন দিক স্ক্রিনশটের মাধ্যমে আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করব।

এন্ড্রয়েড আইসিএস ৪.০ এর হোম মেনু এবং অ্যাপ ট্রে (ওয়ালপেপার ভিন্ন হতে পারে)
ডিসপ্লে:
পরবর্তী চমক এই ফোনের ডিসপ্লে। এই ফোনে ব্যাবহার করা হয়েছে ৪” আইপিএস টিএফটি ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন। এবং সাথে আছে অবিশ্বাস্য ৪৮০*৮০০ পিক্সেলের ডিসপ্লে রেজুলেশন। স্মার্টফোনটি ৫ মাল্টি টাচ সমর্থিত। এই দিক দিয়ে সিম্ফনির মূল থিম “নিউ এক্সপেরিয়েন্স” এর স্বাদ তারা অবশ্যই দিতে সক্ষম হয়েছে বলতে হবে। এই মূল্যের ভিতরে এই মানের ডিসপ্লে এখন পর্যন্ত কেউ দিতে সক্ষম হয়নি। এই মানের ডিসপ্লে ইন্টারনেট এবং অ্যাপলিকেশন ব্যাবহারের ক্ষেত্রে আপনাকে দারুণ সার্ভিস দিতে পারবে বলে আশা করি।

সিম্ফনি w60 এর স্ক্রিন সাইজ
ক্যামেরাঃ
এক্সপ্লোরার ডাব্লিউ ৬০ তে ব্যাক এবং ফ্রন্ট দুইটি ক্যামেরাই দেওয়া হয়েছে। ব্যাক ক্যামেরা আছে ৫ মেগা পিক্সেল এর এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা .৩ মেগা পিক্সেল। আর ভাল মানের ছবি তোলার জন্য আছে ফ্ল্যাশ। এই রেঞ্জের ফোনে দুইটি ক্যামেরা সত্যিই দুর্লভ। কিন্তু ফ্রন্ট ক্যামেরা দিলেও ভিডিও কল করার জন্য থ্রিজি নেই এই ফোনে। যা এই ফোনের অন্যতম বড় নেতিবাচক দিক। যদিও চায়না সেটের ক্যামেরা নিয়ে অনেক অভিযোগ ব্যবহারকারীদের তবে পিছনে ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা একটি সস্তির খবর নিঃসন্দেহে। আর যাদের হাইস্পিড ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশন আছে তারা স্কাইপ বা ফ্রিং এর মাধ্যমে .৩ মেগা পিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও কল করতে পারবেন যে কাউকে।
3G এবং GPS:
জীবনে কখনো মনে হয় দেখননি থ্রিজি এবং জিপিএস নিয়ে আলাদা একটি প্যারা লিখতে কাউকে। কিন্তু অনেকগুলো চমক ভরা এই ফোনে থ্রিজি এবং জিপিএস নিয়েও আছে একটা চমক তবে তা ভাল কিছু নয়। অনেক দিক দিয়ে এই ফোন আগের সব ফোনগুলোকে ছাড়িয়ে গেলেও থ্রিজি এবং জিপিএস নেই এই ফোনে। মানুষ যেখানে স্মার্টফোন কিনছে হাই স্পিড ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে সেখানে থ্রিজি এর অনুপস্থিতি মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আর জিপিএস ছাড়া ম্যাপের কথা বর্তমানে কল্পনা করাই প্রায় অসম্ভব। মানুষ যখন জিপিএস এর ব্যাবহার জানতে এবং ব্যাবহার করতে শুরু করেছে তখনই সিম্ফনির এই দুঃসংবাদ মেনে নেওয়া যায় না। এমনকি সিম্ফনি এর অন্যান্য সাধারন স্মার্টফোনগুলোতেও জিপিএস ছিল। ধারনা করছি সিম্ফনিকে এই কু-কর্মের জন্য কড়া মাশুল দিতে হবে ! অনেক গ্রাহক যারা এটা কিনতে চেয়েছিল তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে এই দুটি অপশনের অনুপস্থিতির জন্য।
ব্যাটারিঃ
সকলেই জানেন অ্যানড্রয়েডের অন্যতম প্রধান সমস্যা এর ব্যাটারি। তবে সেদিকটি মাথায় রেখে এখানেও বেশ ভাল করার চেষ্টা করেছে সিম্ফনি। ডাব্লিউ ৬০ তে তারা দিয়েছে ১৬০০ এমএএইচ ব্যাটারি যা দিয়ে টানা ১৩ ঘন্টা কথা বলতে পারবেন আপনি (নেটওয়ার্ক এবং সেটিংস এর উপর নির্ভর করে)। আমি মনে করি এটাও একটা চমক এবং কারন সেই মূল্য!
মূল্যঃ
পুরো রিভিউ তে অনেক প্রশংসা করেছি এর মূল্য নিয়ে। কিন্তু এখনো বলিনি এর মূল্য কত। বাজারে এই স্মার্টফোনটি আপনি এখন পাবেন অবিশ্বাস্য ৯,৪৯০ টাকায়। এটা আসলেই অবিশ্বাস্য কারন এই ধরনের স্পেসিফিকেশন এর স্মার্টফোন এত দিন ১৫ হাজার টাকার নিচে কল্পনাই করা যায়নি। এমনকি পাশের দেশ ভারতের মোবাইল কোম্পানিগুলোও তাদের এই ধরনের ভাল মানের (চায়না) স্মার্টফোন এত কম মূল্যে দিতে পারেনি।

মূল্যটা আসলেই চমক জাগানো
কেন কিনবেনঃ
অনেক কথা বলেছি স্মার্টফোনটি নিয়ে। এখন কেনা না কেনা আপনাদের হাতে। পুরো রিভিউটা পড়লে এতিমধ্যেই সিদ্ধান্তে পৌছে গেছেন আশাকরি ! আপনি যদি নতুন একটি অ্যানড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যাবহার শুরু করতে চান তবে এটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। তবে অবশ্যই থ্রিজি এবং জিপিএস এর অনুপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
কেন কিনবেন নাঃ
এ সিদ্ধান্তেও পৌছে গেছেন আশা করি। এই ফোনটির একমাত্র ত্রুটি এখনপর্যন্ত থ্রিজি এবং জিপিএস না থাকাটা। আপনি যদি এই দুইটা অপশনকে গুরুত্বপূর্ন মনে করেন তবে এটা না কেনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
গুরুত্বপূর্ন পরিসমাপ্তিঃ
এই অংশটুকু একটু গুরুত্ব সহকারে পড়ুন। বর্তমানে স্মার্টফোনের বাজারে সিম্ফনি এবং ওয়ালটন এর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তার সুত্রপাত আগেই দেখেছেন। সিম্ফনির ডাব্লিউ ৬০ এই যুদ্ধে তাদের দারুন একটি হাতিয়ার। আর সামনে ওয়ালটন ডাব্লিউ ৬০ এর মত একই (একটু ভালও বলতে পারেন কারন তাতে থ্রিজি এবং জিপিএস আছে) ধরনের স্পেসিফিকেশন সমৃদ্ধ একটি স্মার্টফোন “ওয়ালটন প্রিমো জি ১” বাজারে আনতে যাচ্ছে জানুয়ারি তে। আশাকরছি যার প্রাইস রেঞ্জ হবে ৯,০০০-১২,০০০ এর মধ্যে। এর থেকে আরো ভাল মানের আরেকটি স্মার্টফোন “ওয়ালটন প্রিমো আর ১” আনতে যাচ্ছে ওয়ালটন যার সম্ভাব্য মূল্য ১৫,০০০ এর মধ্যে হবে বলে গুঞ্জন আছে। সেটাও জানুয়ারিতে আসবে বলে শোনা যাচ্ছে।
সুতরাং যদি আপনার কষ্টের টাকায় ভাল মানের একটি স্মার্টফোন কিনতেই চান তবে জানুয়ারি এর শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারন আমরা চাই আপনাদের কষ্টের টাকায় ভাল জিনিসটি কিনুন।
আর কেমন লাগল সিম্ফোনি এর নতুন ডিভাইসটা তা লিখুন কমেন্টে। লেখা নিয়ে কোন পরামর্শ থাকলে অবশ্যই বলবেন। সমালোচনাও করতে পারেন।
Post a Comment