ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ক্ষুব্ধ দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এ ধরনের অবস্থান সরকারের ‘ডিজিটাল’ প্রত্যয় এবং ‘মতপ্রকাশ স্বাধীনতা’র পথকে কৌশলে সঙ্কুচিত করার নামান্তর বলে মনে করছেন দেশের প্রযুক্তিবিদরা।
ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করতে শনিবার সকালে বৈঠক করে এর সপক্ষে নিজেদের অবস্থান চূড়ান্ত করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই পরামর্শ সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ বিকেলে ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স (ডব্লিউসিআইটি) সম্মেলন যোগ দিতে দুবাই যাচ্ছে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
এ বিষয়ে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস এর অভিমত, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ ইন্টারনেটের সীমিত নিয়ন্ত্রণের পক্ষে বলবে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খরচ না বাড়ার পক্ষেও বলবেন বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’র পক্ষে বলবে না বাংলাদেশ। প্রয়োজনে জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট বডি’র মাধ্যমে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে মত দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এমন কিছু বলবে না যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে না।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’র পক্ষে বলবে না বাংলাদেশ। প্রয়োজনে জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট বডি’র মাধ্যমে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের পক্ষে মত দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এমন কিছু বলবে না যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে না।
এদিকে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আলোচনা এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশ আইটিইউ’র কাউন্সিল সদস্য হলেও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে না পারাটা সঠিক হয়নি বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিটিআরসি’র নেয়া সিদ্ধান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন এর নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ কাউছার উদ্দীন বলেন, এটা গণ মানুষের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। দুই চারজন সরকারি আমলা বৈঠক করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে কেবল নামকা ওয়াস্তে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করেছে বিটিআরসি। এই সভা থেকে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা হবে কিনা সেটিও তারা নিশ্চিত হননি।
বিষয়টি সম্পর্কে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সহ-সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আইটিইউ দেখছে দুনিয়ার সকল যোগাযোগ দিন দিন ইন্টারনেটে চলে যাচ্ছে। সে কারণে তারা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। আর এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি দেশ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের যারা এ বিষয়ে ভোট দেবেন তারা এ বিষয়ে খুব জ্ঞান রাখেন বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে তাদের আলোচনা করার বা জানার খুব বেশি ইচ্ছেও দেখা যায়নি। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, আইটিইউ’র মুখের ওপর ‘না’ বলে আসার মতো সৎ সাহসও আমাদের আছে কিনা সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।
এশিয়ার চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশসহ, ইউরোপ এবং আফ্রিকার অনেকগুলো দেশ ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের ক্ষমতার পক্ষে মত দিচ্ছে। আইটিইউ’র ১৯৪টি দেশের মধ্যে এ বিষয়ে ভোট হলে তারা নিয়ন্ত্রণের পক্ষেই ভোট দেবেন। এ বিষয়ক একটি সুপারিশ আইটিইউতে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক আন্দোলনে আরব বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে চীনের পরে তারাই সোচ্চার ভূমিকায় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডব্লিউসিআইটি সম্মেলনে ঠিক হবে ইন্টারনেটের ওপর জনসাধারণের অবাধ বিচরণ থাকবে কি-না, না-কি এটি পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলবে। সম্মেলনে হ্যা’র পক্ষে ভোট বেশি পড়লে পাল্টে যাবে ইন্টারনেটে আজকের স্বাধীনতা।
Post a Comment